Advertisement
Waliul

BGS

Apr 1st, 2021
98
0
Never
Not a member of Pastebin yet? Sign Up, it unlocks many cool features!
text 24.70 KB | None | 0 0
  1. বাংলায় ইউরােপীয় বণিকদের আগমন ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে হলেও পরে তারা আমাদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়। এদের মধ্যে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিযােগিতায় এগিয়ে যায়। ১৭৫৭ সালে বাংলা-বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে এক সময় তারা ক্ষমতা দখল করে নেয়। বাংলায় ইংরেজদের শাসন চলে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত। এভাবে ১৭৫৭ সালের পরে বাংলায় যে শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় সাধারণত আমরা তাকে ঔপনিবেশিক শাসন বলি।
  2.  
  3. আয় ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ইংরেজ শাসনামলকে ঔপনিবেশিক যুগ বলি। বিদেশি কর্তৃক কোনাে দেশ দখল করে শাসন প্রতিষ্ঠা করলেই তাকে ঔপনিবেশিক শাসন বলা হয় না। ঔপনিবেশিক শাসনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দখলদার শক্তি চিরস্থায়ীভাবে শাসন প্রতিষ্ঠা করতে আসে না। তারা জানে একদিন এই শাসনের পাট উঠিয়ে তাদের ফিরে যেতে হবে নিজ দেশে। তবে দখলদার শক্তি যতদিন শাসক হিসাবে থাকবে ততদিন সেই দেশের ধন-সম্পদ নিজদেশে পাচার করবে। তারপর যখন তাদের শাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে বা অন্য কোনাে কারণে অন্যের দেশ শাসন করা আর লাভজনক মনে হবে না তখন ফিরে যাবে নিজ দেশে। এভাবে অন্য কোনাে দেশের উপর দখলদারদের আধিপত্যই হচ্ছে উপনিবেশ স্থাপন। আর উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করা এই শাসনকে বলা হয় ঔপনিবেশিক শাসন।
  4.  
  5. "দি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে এদেশে তাদের প্রতিপত্তি বাড়িয়ে নবাবের দরবারে প্রভাব বিস্তারের মতাে ক্ষমতা ভােগ করতে শুরু করে। ১৭৫৬ সালে আলিবর্দি খাঁর মৃত্যুর পর ক্ষমতার উত্তরাধিকার নিয়ে নবাব পরিবার এবং রাজপ্রাসাদের অভিজাতদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় কোম্পানির কর্তারা এর সুযােগ নিতে ভুল করে নি। তরুণ নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে তাঁর খালা ঘসেটি বেগম, মীর জাফর, মীর কাসিমসহ রাজদরবারের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এবং উমিচাঁদ, জগত শেঠ ও রাজবল্পভদের মতাে তক্কালীন ধনী অভিজাতদের একটি অংশ যড়যয়ে লিপ্ত হলে ইংরেজ বণিকরা তাদের সাথে যােগ দেয়। এই সুযোগে মাদ্রাজ থেকে সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে ইংরেজ সেনাপতি ওয়াটসন ও ক্লাইভ কলকাতা দখল করে নেয়। এরপর নবাবের রাজধানী মুর্শিদাবাদ দখল করতে ক্লাইভ পলাশির আম্রকাননে উপস্থিত হয়। ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটে। নবাব কে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিজয়ের পর মীর জাফরকে নবাব বানালেও মূল ক্ষমতা চলে যায় ধূর্ত ও দুর্ধর্ষ ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভের হাতে। শেষ পর্যন্ত ১৭৬৫ সালে ক্লাইভ দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করেন।
  6.  
  7. ১৭৭০ (বাংলা ১১৭৬) সালে বাংলায় নেমে আসে দুর্ভিক্ষের করাল ছায়া। দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ লােক অনাহারে মারা গেলেও কোম্পানি করের বােঝা কমানাের কোনাে পদক্ষেপ নেয় নি। এই দুর্ভিক্ষে বাংলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লােকের মৃত্যু হয়েছিল। ইতিহাসে এটি ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত।
  8.  
  9. ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে এদেশে একাধিক গভর্নর ছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য ওয়ারেন হেস্টিংস, লর্ড কর্নওয়ালিস, লর্ড ওয়েলেসলি, লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক, লর্ড হার্ডিঞ্জ, লর্ড ডালহৌসি প্রমুখ। ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডও গ্রহণ করেছিলেন। যেমন : যােগাযােগ- রেল, ডাক ও তার ইত্যাদি। ইংরেজ শাসকদের গৃহীত প্রধান প্রধান কাজ নিচে উল্লেখ করা হলাে-
  10.  
  11. ১. ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গৃহীত ভারত শাসন আইনে বাংলায় ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেলের হাতে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা অর্পণ করা হয়।
  12.  
  13. ২. ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করে ব্রিটিশদের অনুগত জমিদার শ্রেণি তৈরি করা হয়। ৩. রাষ্ট্র ও প্রশাসন পরিচালনায় ইংরেজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হয়।
  14.  
  15. ৪. মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তর, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে রূপান্তর করা হয়। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে কলকাতাই হয় বাংলার রাজধানী।
  16.  
  17. তবে এই সময়ে ইংরেজ গভর্নর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক ও লর্ড হার্ডিঞ্জ এদেশে শিক্ষা বিস্তারসহ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সূচনা করেন। এ ছাড়া সতীদাহ প্রথা ও বাল্যবিবাহ রাধ এবং বিধবা বিবাহ প্রবর্তনসহ সামাজিক কুপ্রথা নিবারণে রাজা রামমােহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতাে বাঙালিদের উদ্যোগকে তারা সহযােগিতা দেন। এভাবে দেশে একটি নতুন শিক্ষিত শ্রেণি ও নাগরিক সমাজ গড়ে উঠলেও বৃহত্তর বাঙালি সমাজ ইংরেজ কোম্পানির শাসনে প্রকৃতপক্ষে শােষিত হয়েছে।
  18.  
  19. ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দখল পেয়েই ক্ষান্ত ছিল না। দিল্লিতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মােগল সাম্রাজ্যে বিভিন্ন সংকট দেখা দেয়। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ছােটোবড়াে নবাব ও দেশীয় রাজারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। এর ফলে দিল্লির মসনদও দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযােগে কোম্পানির সেনাবাহিনী নানা দিকে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে।
  20.  
  21. ব্রিটিশ শাসনকালে (১৮৫৮-১৯৪৭) বাংলার সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল কৃষক, অন্য দিকে মুষ্টিমেয় জমিদার ছিল সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণি। সমাজে কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষের সংখ্যা যথেষ্ট ছিল না। বস্তুত ব্রিটিশ শাসনে বাংলার অর্থনীতির মেরুদণ্ড কৃষি ও এককালের সমৃদ্ধ তাঁতশিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। বাংলার বণিক গােষ্ঠী তেমন সংগঠিত ছিল না, শিল্পেও বাংলার অবস্থান তখন উল্লেখ করার মতাে নয়। সামাজিক অনুশাসনের দাপটে নারীসমাজ ব্যাপকভাবে পিছিয়ে ছিল। মধ্যবিত্ত সমাজও ততটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে নি। ব্রিটেন ছিল সেই সময়ে পৃথিবীর প্রধান ধনী দেশ। গােটা ভারত ছিল ব্রিটেনের উপনিবেশ অর্থাৎ শােষণের ক্ষেত্র।
  22.  
  23. ইংরেজরা তাদের শাসন পাকাপােক্ত করার লক্ষ্যে দেশীয়দের মধ্য থেকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত একটি অনুগত শ্রেণি তৈরিতে মনােযােগ দেয়। ১৭৮১ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এর একটা বাড়তি লক্ষ্য ছিল চাকরির সুযােগ সৃষ্টি করে রাজ্য হারানাে ক্ষুব্ধ মুসলমানদের সন্তুষ্ট করা। এরই ধারাবাহিকতায় হিন্দুদের জন্যে ১৭৯১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় সংস্কৃত কলেজ। ইংরেজদের উদ্দেশ্য সাধনের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার সংস্পর্শে এসে স্থানীয় মানুষের মধ্যে নতুন চেতনার স্ফুরণ ঘটতে থাকে। বহুকালের প্রচলিত বিশ্বাস, সংস্কার, বিধান সম্পর্কে তাদের মনে সংশয় ও প্রশ্ন জাগতে থাকে। হিন্দু সমাজ থেকে সতীদাহের মতাে কুপ্রথার বিরুদ্ধে রীতিমতাে আন্দোলন শুরু হলাে, বিধবা বিবাহের পক্ষে মত তৈরি হলাে। এদেশে এ সময় জ্ঞানচর্চায় সীমিত কিন্তু কার্যকর জোয়ার সৃষ্টি হয়। ইংরেজ মিশনারি স্যার উইলিয়াম কেরি খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের কর্মভূমিকা ছাড়াও নানা সামাজিক কাজে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। তিনি বাংলা ব্যাকরণ রচনা, মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সংবাদপত্র প্রকাশ, স্কুল টেকস্ট বাের্ড গঠনসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজের পথ প্রদর্শন করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইংরেজরা উচ্চ শিক্ষার জন্য সারাদেশে স্কুল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কিছু কলেজও স্থাপন করে। অবশেষে ১৮৫৭ সালে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার প্রতিষ্ঠান হিসাবে কলকাতা বিশবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
  24.  
  25.  
  26. ১৮২১ সালে শ্রীরামপুরে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপনও বাংলার মানুষের মনকে মুক্ত করা ও জাগিয়ে তােলার ক্ষেত্রে আরেকটি পথ খুলে দেয়। এর ফলে বইপুস্তক ছেপে জ্ঞানচর্চাকে শিক্ষিত সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া ও স্থায়িত্ব দেওয়ার পথ সুগম হয়। এ সময় সংবেদনশীল মানুষের নজর যায় সমাজের দিকে। সমাজের অনাচার নিয়ে যেমন তারা আত্মসমালােচনা করেছেন তেমনি শাসকদের অবিচারের বিরুদ্ধেও কঠোর ভাষায় সমালােচনা করেছেন। বাংলা ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশ করে জনমত সৃষ্টিতে এগিয়ে আসে অনেকে।
  27.  
  28. রাজা রামমােহন রায় ও ঈশ্চরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারে হাত দেন। ডিরােজিও, বিদ্যাসাগর প্রমুখ অবাধে মুক্তমনে জ্ঞানচর্চার ধারা তৈরি করেন। আবার বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, মাইকেল মধুসূদন ও রবীন্দ্রনাথের হাতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। বাংলা সাহিত্যে মীর মশাররফ হােসেন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলামের অবদানও ব্যাপক।
  29.  
  30. বাঙালির এই নবজাগরণ কলকাতা মহানগরীতে ঘটলেও এর পরােক্ষ প্রভাব সারা বাংলাতেই পড়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনামলের আধুনিক শিক্ষা ও জাগরণের আরেকটি দিক হলাে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ। সেই সাথে স্বাধীনতার আকাক্ষা ও গণতান্ত্রিক অধিকার বােধেরও উন্মেষ ঘটতে থাকে।
  31.  
  32. সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাকে দুইভাগে ভাগ করা হবে। ঢাকাকে রাজধানী করে নতুন প্রদেশ করা হবে। এই প্রদেশের নাম হবে 'পূর্ব বঙ্গ ও আসাম প্রদেশ। একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর এই প্রদেশ শাসন করবেন।
  33. সরকারি এই সিদ্ধান্তে যুক্তি থাকলেও কলকাতাকেন্দ্রিক শিক্ষিত বাঙালিদের অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন। তারা মনে করেন বাংলাকে ভাগ করার মধ্য দিয়ে ইংরেজ শাসকরা হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাঙন ধরাতে চাচ্ছেন। কারণ, পূর্ববাংলার বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান। তাই মুসলমান নেতারা ভেবেছেন নতুন প্রদেশ হলে পূর্ব বাংলার উন্নতি হবে। কিন্তু শিক্ষিত হিন্দু নেতারা বঙ্গভঙ্গের বিরােধিতা করেন। এ কারণে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বড় নেতাদের অধিকাংশ ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের। তারা মুসলমান নেতাদের সাথে পরামর্শ না করে বঙ্গভঙ্গের বিরােধিতা করেন। ফলে মুসলমান নেতাদের মধ্যে নতুন ভাবনার সৃষ্টি হয়। তারা বুঝতে পারে মুসলমানদের দাবি আদায়ের জন্য তাদের নিজেদের একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগ নামে মুসলমানদের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজদের অভিসন্ধি অনেকটা সফল হয়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হওয়ার পর থেকে দুই সম্প্রদায়ের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয় ।
  34.  
  35. এরপরেও ইংরেজ শাসন বিরােধী আন্দোলন ভারতবর্ষে দানা বাঁধতে থাকে। সারা ভারত জুড়ে যখন ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলন কর্মসূচি চলতে থাকে তখন এক সময় আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব বাঙালি নেতাদের হাত থেকে চলে যেতে থাকে। পুনরায় বাঙালি নেতাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য ইংরেজরা ভাগকর-শাসনকর নীতি প্রয়ােগ করতে থাকে। এর ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক দল হিসাবে চিহ্নিত হতে থাকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে পরিচিতি পায় মুসলিম লীগ। এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মুসলমান হিন্দু নেতা এবং দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নানাভাবে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে থাকে। এতে এদেশের রাজনীতি থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা কমে যেতে থাকে। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগ দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির পরিকল্পনা প্রদান করে। তাতে বাংলার জনগণ "হিন্দু-মুসলমান পরিচয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির ক্ষেত্রে লাহাের প্রস্তাবের ধারণাই কার্যকর করা হয়। শেষদিকে বাংলা ভূখণ্ডকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্যে একটি চেষ্টা হলেও ১৯৪৬ সালের নির্বাচন এবং কলকাতা ও ননায়াখালীর দাঙ্গা সব কিছুকে অসম্ভব করে দেয়। পূর্ব-বাংলা পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল হিসাবে পূর্ব পাকিস্তান নামে ব্রিটিশ অধীনতা থেকে মুক্তি পায়। তবে তা পূর্ব-বাংলার জনগণের প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠতে পারে নি। পাকিস্তানের শাসকগােষ্ঠী পূর্ব-বাংলার জনগণের উপর পরাধীনতা চাপিয়ে দেয়। প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্টের পর থেকেই পূর্ব-বাংলার জনগণকে প্রকৃত স্বাধীনতার জন্যে নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে হয়।
Advertisement
Add Comment
Please, Sign In to add comment
Advertisement