Advertisement
jashimabm

জাতিসংঘের হুঁশিয়ারি

Jan 30th, 2015
238
0
Never
Not a member of Pastebin yet? Sign Up, it unlocks many cool features!
text 12.96 KB | None | 0 0
  1. জাতিসংঘের হুঁশিয়ারি
  2. দেশের পরিস্থিতি গুরুতর বললেও কম বলা হয়। এক চরম দুঃসময় ও ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে দেশ। আন্দোলনরত ২০ দলীয় জোট এবং প্রতিপক্ষ সরকারদলীয় জোটের অনমনীয় ও অনড় অবস্থানের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি উত্তরণের কোন উপায় এখন আর কেউ দেখছে না। ‘ডেডলক’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমন জটিল, অরাজক ও অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখোমুখি দেশ আর কখনো হয়েছে বলে স্মরণ করা যায় না। এ অবস্থার মধ্যে প্রতিদিন মানুষ মরছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-সহ যথেচ্ছভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। অর্থনীতির মেরুদ- নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে উৎপাদন, সরবরাহ, আমদানি-রফতানিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। সব মিলিয়ে এক অসহনীয় পরিস্থিতি। এ পরিস্থিতি কতদিন চলবে, কোন দিকে মোড় নেবে, তা ধারণা করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতির অবসানে সব মহল থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হলেও কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। এমতাবস্থায় দেশে-বিদেশে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এই অচলায়তন ভাঙ্গা সম্ভব বলে প্রত্যেকে একবাক্যে বললেও এর কোন আভাস-ইঙ্গিত নেই। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলা হলেও নতুন আরেকটি নির্বাচনের উদ্যোগ না নেয়া ও অনীহা প্রকাশ করায়, চলমান পরিস্থিতির কোন সুরাহা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ, বৃটিশ পার্লামেন্টের হাউস অফ কমন্স, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। উল্লেখিত সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে তাদের উদ্বেগের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। গতকালের দৈনিক ইনকিলাবসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতিসংঘ এক ব্রিফিংয়ে বলেছে, বিরোধী দলের কোন শীর্ষ নেতাকে খেয়াল-খুশিমত গ্রেফতার করতে পারে না আইন প্রয়োগকারীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। ব্রিফিংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশী সেনা মোতায়েনের বিষয়টি মানদ- যাচাইয়ের নীতির অধীনে রাখা হয়েছে বলে বলা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হত্যা, গুম ও নির্বিচারে গ্রেফতারসহ নিরাপত্তা বাহিনীসমূহের মারাত্মক আইন লঙ্ঘনের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা অপহরণ, হত্যা ও খেয়ালখুশি মতো আটক করছে। বিশেষ করে তা করা হচ্ছে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের টার্গেট করে। হাউস অফ কমন্সের আলোচনায় বলা হয়েছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প।
  3. আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে যেসব অভিযোগ উত্থাপন ও সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে, তা গুরুত্বসহকারে আমলে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বের অভিভাবক সংস্থা জাতিসংঘ যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং উদ্বেগেরও বটে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বিধায় তার এই উদ্বেগ প্রকাশের সঙ্গত কারণ রয়েছে। জাতিসংঘের শান্তি মিশনের অধীনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য বিভিন্ন দেশে মোতায়েন রয়েছে। সংখ্যার বিচারে তারা শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে। সংঘাতপূর্ণ বিভিন্ন দেশে তারা প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছে এবং বিভিন্নভাবে পুরস্কৃতও হচ্ছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশের সুনাম বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি বিপুল বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হচ্ছে। এই উজ্জ্বল অবস্থানে থাকাবস্থায় নিজ দেশে যদি এসব বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে এবং বিতর্কিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, তবে তা দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যের। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বিজিবি ও র‌্যাবে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাই নেতৃত্ব পর্যায়ে রয়েছেন। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি ও র‌্যাবের ভূমিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ফলে এর দায় বাহিনী দু’টিতে নিযুক্ত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা তথা সেনাবাহিনীর এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। জাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশী সেনা মোতায়েনের বিষয়টি সামনে আনার মধ্য দিয়ে একটি বার্তা দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, নিজ দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিযুক্তদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, তার প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পড়া অস্বাভাবিক নয়। পরিতাপের বিষয়, আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের কোন বিচলন আছে বলে মনে হয় না। এমন মনে করা অসঙ্গত মনে হবে না যে, বালিতে উটপাখির মতো মাথা গুঁজে ঝড়ের বিষয়টি যেন উপেক্ষা করা হচ্ছে। সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে বলে বলা হচ্ছে। অথচ বাস্তবচিত্র সম্পর্কে দেশ-বিদেশের সকল মহলই ওয়াকিবহাল। এ অবস্থার মধ্যে মুদ্রা নীতি ঘোষণা, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকা-ের পরিকল্পনা যতই করা হোক না কেন, তার বাস্তবায়ন যে দুরূহ, সচেতন মহলমাত্রই তা জানেন।
  4. জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও সংস্থার সতর্কবাণী উচ্চারণ, উদ্বেগ ও প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, তা অনস্বীকার্য। দেশের মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সাথে তাদের এসব মতামতের মিল রয়েছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশের প্রয়োজন পড়ত না। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা যে ক্ষুণœ হচ্ছে, তা নিয়ে দ্বিমতের সুযোগ নেই। আমরা চাই, উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশে ও বিদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও খেয়ালখুশিমতো আটকের অভিযোগের অবসান হোক। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সুনাম অক্ষুণœ থাকুক। দমন-পীড়ন বা জবরদস্তিমূলক কর্মকা-ের পরিবর্তে রাজনৈতিক সংকটকে রাজনৈতিকভাবে দ্রুত সমাধান করা হোক। রাজনৈতিক সংকটকে ধামাচাপা দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্তির উপর নির্ভর করে সন্ত্রাস দমনের নামে প্রতিপক্ষ দমানোর প্রবণতা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
  5. http://www.dailyinqilab.com/2015/01/31/236590.php
Advertisement
Add Comment
Please, Sign In to add comment
Advertisement